বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন
জাহাঙ্গীর আলম ছিদ্দিকী : লেখক, কলামিস্ট ও শিক্ষক, দক্ষিণ খুরুশকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
শিক্ষার্থীর নাম : আইনান আহমেদ প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আইনান’র বুদ্ধি স্তরের অভিজ্ঞতাঃ–বুদ্ধি:- অর্থ, মনিয়ার উইলিয়ামস বলেন, “গঠন, ধারণা ধরে রাখার ক্ষমতা; বুদ্ধি যুক্তি, বুদ্ধি মন”, বুদ্ধিবৃত্তিক অনুষদ এবং কিছু “বিবেচনা, বিচার, বোঝা, বোঝা” করার ক্ষমতা। বুদ্ধি হল, জাগ্রত হওয়া, বুঝতে, জানা থেকে উদ্ভূত।
প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি হলো চারটি ক্ষেত্রে প্রক্ষোভসহ যুক্তি প্রদর্শন করার ক্ষমতা। যেমন – প্রক্ষোভ প্রত্যক্ষণ করা, চিন্তার সঙ্গে সমন্বয় করা, প্রক্ষোভকে বোঝা এবং নিয়ন্ত্রণ করা।
তার বুদ্ধি মেধা প্রশংসার যোগ্য ও দাবিদার- তার অনুভূতি, আবেগ, বিবেক, মনুষ্যত্ব, সৃজনশীলতা, আইডিয়া, অনুকরণ, অনুসরণ, দৃষ্টি ভঙ্গি, ধ্যান ধারণা, চিন্তা চেতনা, শেখার আগ্রহ, জানার প্রবল ইচ্ছা শক্তি, বুদ্ধি ও বুদ্ধাংক নির্ণয়’র সূচক হিসেবে বুদ্ধি পরিমাপ তুলে ধরলাম —
শিশু মনোবিজ্ঞানেরা যুগ যুগ ধরে শিশুদের বুদ্ধাংক পরিমাপ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, প্রতিটি শিশুর মেধা, মনন, প্রতিভা, সৃজনশীলতা, আচরণিক পরিবর্তন, পরিবার ও বিদ্যালয়, সামাজিক পরিবেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা অত্যাবশ্যক।
মনোবিজ্ঞানেরা বলেছেন —প্রতিটি শিশু জন্ম গ্রহণ করে এক ও অভিন্ন মেধা নিয়ে। কেউ পরিবার ও সামাজিক বিবর্তনের ফলে শিশুরা অনৈতিক শিক্ষা ও বিপথগামী পথে ধাবিত হচ্ছে । তার উত্তম কারণ হল পরিবার ও সামাজিক সৎ ইচ্ছার অভাবে ও পারিবারিক অচেতন অবহেলার কারণে।
বুদ্ধ্যঙ্ক বা আইকিউ (ইংরেজি: Intelligence quotient বা IQ), বুদ্ধিমত্তা মূল্যায়ন করতে পরিকল্পিত বিভিন্ন প্রমিত পরীক্ষার একসঙ্গে প্রাপ্ত ফলাফল। ইংরেজি আইকিউ শব্দটি মূলত মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম স্টার্ন কর্তৃক উদ্ভাবিত জার্মান শব্দ Intelligenz-Quotient থেকে নেয়া হয়েছে।
একজন ব্যক্তির বুদ্ধাঙ্ক (IQ) নির্ণয়ের সূত্র প্রদত্ত :– IQ=m/c×100 যেখানে, m হল মানসিক বয়স (mental age) এবং c হল পঞ্জিকা নিদি’ষ্ট বৎসরানুসারে কাল (chronological age)। 12 বৎসর বয়সের একদল শিশুর ক্ষেত্রে 80 leIQle140 হলে তাদের মানসিক বয়সের প্রসার (range) নির্ণয় করো।
যাদের বুদ্ধ্যঙ্কের মান ৭০ থকে ৯০ এর মধ্যে- তাদের বলা হয় স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন। যাদের বুদ্ধ্যঙ্কের মান ৯০ থেকে ১২০ এর মধ্যে তাদের বলা হয় স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন। যাদের বুদ্ধ্যঙ্কের মান ১২১ থেকে ১৪০ এর মধ্যে তাগের বলা হয় বেশি বুদ্ধি সম্পন্ন। যাদের বুদ্ধ্যঙ্কের মান ১৪০ এর উপরে তাদের বলা হয় জিনিয়াস / মনীষী ।
বুদ্ধাংক হলো—মানসিক বয়স ও প্রকৃত বয়সের অনুপাত। মানসিক বয়সকে প্রকৃত বয়স দিয়ে ভাগ করে ১০০ দ্বারা গুণ করলে বুদ্ধাংক পাওয়া যায় । এখানে ১০০ দ্বারা গুণ করা হয় ভগ্নারংশ এড়ানোর জন্য এবং ১০০ কে ধ্রুবক হিসেবে ধরা হয় । যাদের বুদ্ধাংকের মান ৭০ এর নীচে তাদের বলা হয় জড় বুদ্ধিসম্পন্ন।
IQ মানে “intelligence quotient”. বলতে গেলে এটা বুদ্ধি পরিমাপের একটা মাপকাঠি। তবে আপনার IQ আপনি বৃদ্ধি করতে পারবেন চাইলেই। যাদের IQ বেশি হয় তাদেরকে জিনিয়াস হিসবে ভাবা হয়। অনেকের জন্ম থেকেই IQ অনেক বেশি থাকে। অনেকেই ভাবেন IQ হয়তো আপনার কতটুকু সম্ভাবনা আছে সেটার মাপকাঠি, এটা আসলে ভুল। IQ কখোনো আপনি কতোটা সম্ভাবনাময় তা ঠিক করতে পারেনা। IQ টেস্ট করতে কোনো না কোনো সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যেতে হয়, অনলাইনে যেসব IQ টেস্ট দেখেন তার বেশিরভাগই ভুয়া। IQ টেস্ট করে বোঝা যায় সেই মুহূর্তে আপনার কগনাটিভ স্কিল, চিন্তন দক্ষতা, প্রবলে সল্ভিং দক্ষতা কতটুকু। যাদের জন্ম থেকেই IQ সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি হয় তাদেরকে অসাধারণ ভাবা হয়, এমন মানুষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার হলো— সুরক্ষার অধিকার, নিরাপত্তার অধিকার, মানবাধিকার, শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ, নৈতিকতা শিক্ষার অধিকার, তাদের ভালোবাসার অধিকার, শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, বাসস্থান এর অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করা আপনার আমার সবার উপযুক্ত সময়ে প্রয়োগ করতে হবে ।
আইনান আহমেদ’র বুদ্ধি ও বুদ্ধাংক নির্ণয়’র সূচক বাস্তবতার আলোকে যা পেলাম তা হুবহু নিন্মে তুলে ধরলাম । ——-
আইনানকে আমি তৃষ্ণার্ত ” কাক ও কলসির “কাহিনিটি পড়াইতেছিলাম– তখন কলসির পানি কলসির তলায় ছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করার পরও তৃষ্ণার্ত কাক কলসির পানি নাগাল পেল না। কাক তখন কলসিটাকে কাত করতে চাইল। কিন্তু পারল না। তাই পানি খাওয়া হলো না । তার খুব দুঃখ হলো। কারণ সফলতার চেষ্টা ব্যক্ত হলো কাক। তৃষ্ণার্ত কাকের পিপাসাও মিটলো না।
তখন আমি আইনানকে জিজ্ঞেস করলাম,
তৃষ্ণার্ত কাক অনেক দুঃখ পেল কেন? কাক তো পানির পিপাসা মিটাতে না পরে দুঃখ পেল। এখন তুমি বল, তোমার কোন দুঃখ আছে কিনা বল আইনান, তখন আইনান জবাব দিল –স্যার আমার কোন দুঃখ নাই। তাই নাকি? তাহলে এখন ধরে নিতে পারি তুমি অনেক সুখী মানুষ, তাই না ?
তখন আমি আইনানকে বললাম আমার অনেক দুঃখ আছে —-“বাবা”।
স্যার; আপনার আবার, কিসের দুঃখ? আছে বাবা! বলব না, কেন স্যার?
আইনান হঠাৎ চিন্তা করে বলল, স্যার আপনার কিসের দুঃখ বলতে পারব আমি। আমি অবাক হয়ে তার মুখের দিকে থাকিয়ে থাকলাম।
আইনান জবাবে বলল, আপনার দুঃখ হচ্ছে আমি পড়ার সময় বেশি বেশি দুষ্টুমি করি, এটাই হল আপনার বড় দুঃখ। তাই নাকি? তুমি কিভাবে বুঝতে পারলে, বুঝ না স্যার, আইনান বলল, আমি সব বুঝি এবং বুদ্ধিমান।
জেনেটিক’র সূত্রে মতে—যাদের রক্তে পূর্ব বংশের রক্ত ধারণ করে তাদের মেধা মননের প্রভিভার বিকাশ এভাবে ঘটে ও বহন করে এটাই হচ্ছে— বাস্তবতা!
“পারিবারিক শিক্ষাই বড় শিক্ষা।”
নিষ্পাপ শিশু ফুটন্ত লাল গোলাপ ফুল’টার জন্য মহান আল্লাহ্ পাকের কাছে কোটি কোটি প্রার্থনা রইল মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন ঐশ্বরিক শক্তি দিয়ে যে কোন বিপদ- আপদ, বলা মুসিবত থেকে রক্ষা করে এবং আলোকিত মানুষ হওয়ার জন্য দোয়ার আর্জি রইলো। আমিন।
সত্যিই সে আমার মনের অনুভূতি ও আবেগ সঠিকভাবে পরিমাপ এবং উপলব্ধি করতে পেরেছে। এটাই হল– একজন শিশুর বুদ্ধি ও বুদ্ধাংক নির্ণয়।
তখন জবাবে আমি বললাম, তূমিতো সব পার বাবা, একটু দুষ্টুমি করো আর কি? মনোবিজ্ঞানেরা বলেছেন–দুষ্টু শিশুরা নাকি অনেক মেধাবী হয় । তাই নাকি স্যার? হ্যাঁ !
পরিশেষে আইনান আমাকে বলল, স্যার আমিতো তা হলে অনেক বুদ্ধিমান আর মেয়েরা অনেক বুদ্ধিমতি আজকে থেকে আমি আর দুষ্টুমি করবো না। আজকে থেকে মনোযোগ দিয়ে লেখা-পড়া করব এবং মানুষের মতো মানুষ হবো। ইনশআল্লাহ ।
আমি আইনানকে আবার জিজ্ঞেস করলাম তুমিতো সত্যিই মানুষ। আইনান বলল, না স্যার, লেখাপড়া করে দেশের ও দেশপ্রেমিক আলোকিত মনুষ্যত্ববোধ, বিবেকবান আদর্শিক মানুষ হয়ে দাদা, নানা, পিতা-মাতার মতো জ্ঞানধার ক্ষুর মানবিক মানুষ হবো।
শেষান্তে আমাদের উপলব্ধি করা উচিত শিশুরা নিরাপদ ভয়-ভীতি মুক্ত বিদ্যালয়, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র বলেন, কিংবা ঘর বলেন অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলেন, শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ। চাই!! চাই!! চাই!!
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply